“জীবন থেকে চলে গেল আরো একটি বসন্ত” এরকম উক্তি শুনি মাঝে মাঝে কিন্তু আমার মনে সদা জাগ্রত হয় জীবন থেকে চলে গেল আরো একটি শরৎকাল! শরৎকাল! আমার স্মৃতিতে অমলিন। অনুভুতি নামক বিষাদে পুড়ি আমি আমার ফেলে আসা শৈশবের শরৎকাল নিয়ে। শরতের গাড়ো নীল আকাশে ঝকঝকে পরিস্কার শিমুল তুলোর মত মেঘের ভেলা,চারিদিকে মৃদু বাতাসের রিন রিন ছন্দ,শিউলি ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরা সকাল আজো আমাকে উদাস করে। খুজে ফিরি ফেলে আসা মধুর শৈশব ।
কবিগুরু মত আমারো বলতে ইচ্ছা হয়
“শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি
ছড়িয়ে গেলো ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি”
মনের কোনায় স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে এইত সেদিন পুকুরে, খালে বিলে সবাই পাঠ ধোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আর সাথে দাপিয়ে বাড়ছে একঝাক দুরন্ত শিশুর হৈ-হুল্লোড়। বাড়ির সামনে যে পুকুরটা অব্যাহৃত বলে অবহেলা করত শরৎকাল আসলে সে যৌবন ফিরে পেত।চাষীরা পরম মমতায় তার বুকে পাট জাগ দিত।আর পুকুরকে ঘিরে থাকত কত চাষীর স্বপ্ন,কত পরিবারের পাওয়া না পাওয়া সুখ দুঃখের গল্প।
সারাদিন পাঠ ধোয়ায় ব্যাস্ত ক্লান্ত চাষীরা মাঝে মাঝে শরীর জুড়াত আর বিরক্ত চোখে আমাদের দেখত। কারন ততক্ষনে চাষীদের অর্ধভাংগা পাঠখড়িগুলোকে খেলার জন্য চেয়ার বানিয়ে লড়াই করছি কার কতটা চেয়ার দখলে। মাঝে মাঝে এই লড়াই হাতাহাতিতে রুপ বদল করত। এখন অবশ্য সেসব নেই পাঠখড়ি আর কেও ভাংগে না কৃষির আধুনিকায়নে পানের বরজের জন্য লম্বালম্বিভাবেই রাখে। চেয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যেত অসংখ্য রং বেরং এর ফড়িং অবাধে আকাশের বুক চিরে উড়ে বেড়াচ্ছে। ফড়িংগুলাকে ছোয়া না গেলেও ধরার জন্য বৃথা চেস্টায় লাফাতাম। মাঝে মাঝে দখলকৃত চেয়ার ফেলে ফড়িং এর পিছেই ছুটতাম। কখনো ধরা পেতাম কখনো হতাশ হতাম।
কিন্তু এখন আর গ্রামে গঞ্জেও এসবের দেখা মেলা ভার। সময়ের বিবর্তনে আধুনিকতার যুগে ব্যাস্ত জীবনকে পাশ কাটিয়ে যখন একটু থামতে মন চাই ভাবতে থাকি আমরা প্রকৃতি থেকে শুধু নিয়েই যাচ্ছি। আজো শুভ্র মেঘের দল যখন নীল আকাশ ছোয় আমি আমার হারিয়ে যাওয়া শরৎ খুজি,ফড়িং এর পিছে সবুজ ধানক্ষেতের বুক বিলি দিয়ে দৌড়ানো শৈশব খুজি, শিউলি ফোটা ভোরের ফুল কুড়ানো কিশোরী কে খুজি।সর্বপরি গতিমান জীবনের বাস্তবতার কড়াঘাতে সবাই যে কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছি, সবাইকে থামিয়ে জানতে মন চাই শরৎ কি চলে গেছে? আমি পাইনা কেন সেই কিশোরীকে আমার আমিতে ?