আলমডাঙ্গার স্ট্রিট ফুড-৬

199
আলমডাঙ্গার স্ট্রিট ফুড-৬
আব্দুল নাজিম

আব্দুল নাজিমের আদি নিবাস একসময়ের বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জেলা ময়মনসিংহে। পিতা গফুর শেখের পাঁচ ছেলে মেয়ের মধ্যে তিনি সেজ। যখন আব্দুল নাজিমের বয়স ১৪ বছর তখন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ময়মনসিংহ টেকনিক্যাল কলেজে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং দেওয়া হতো। আব্দুল নাজিম সেই ট্রেনিং ক্যাম্পে ফুটফরমায়েশ খাটতেন। যুদ্ধ শেষে একদিন ঐ ক্যাম্পে নারায়ণগঞ্জ জেলার কমান্ডার হাসেম আলীর এলএমজি কৌতূহল বসত নাড়াচাড়া করতে গেলে ভুলবশত একটা গুলি ফুটে যায়। ভয় পেয়ে আব্দুল নাজিম সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসেন কুষ্টিয়ায়।


কুষ্টিয়া আসার পর পাঁচ বছর আর বাড়িতে যাননি। পাঁচ বছর পর বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন তাঁর পিতা আর নেই। পিতার সাথে শেষ দেখা না হওয়ার ব্যাপারটা নাজিম আলীকে এখনও পোড়ায়; মনে হলে চোখ ছলছল করে। বাড়ি থেকে আবার ফিরে আসেন কুষ্টিয়া অঞ্চলে এবং আশ্রয় নেন আলমডাঙ্গার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রায়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী কামালের বাড়িতে। তখন থেকেই আলমডাঙ্গাতে স্থায়ীভাবে থাকা শুরু এবং সংসার পাতা।


একসময় মাথায় করে মুড়ি-মশলা বিক্রি করতেন। পরে ভ্রাম্যমাণ গাড়ীতে চটপটি বিক্রি শুরু করেন। কখনও আলমডাঙ্গা থানার সামনে, কখনও একটু এগিয়ে কলেজ রোডে ঢোকার মুখে দেখা যায় তাঁর ভ্রাম্যমাণ চটপটির দোকানটিকে। তিনিই সম্ভবত আলমডাঙ্গাতে চটপটি বিক্রির সূচনা করেন। চটপটি বিক্রির অর্থ দিয়েই হয় তাঁর রুটি-রুজির ব্যবস্থা। এভাবেই তিনি আলমডাঙ্গার রাধিকাগঞ্জে জমি কিনে বাড়ি করেছেন; পাঁচ মেয়ে এবং এক ছেলে বিয়ে দিয়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষ আব্দুল নাজিম আছেন আব্দুল নাজিমের মত করেই। তাঁর জন্য শুভ কামনা।