অবহেলায় নষ্ঠ হতে চলেছে ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আলমডাঙ্গা!

253
ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আলমডাঙ্গা!

আলমডাঙ্গা উপজেলা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে কুমারী ইউনিয়নে ১০ দশমিক চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। ১৯৭৮ সালে ডেনমার্ক সরকারের সহযোগিতায় দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামোটি বর্তমানে কতৃর্পক্ষের অবহেলায় প্রায় পরিত্যক্ত হতে চলেছে । প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের পরে থেকে এযাবৎকালে আর কোন সংস্কার করা হয়নি। কালের বিবর্তনে সয়ংসম্পূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান আজ পরিত্যক্ত হতে চলেছে। সেই সাথে ধ্বংস হতে চলেছে প্রন্ততাত্ত্বিক নিদর্শন কুমারীর জমিদার শৈলেন সাহার বাড়িটি।

ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের শুরুর কথা

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ব্যারিস্টার বাদল রশিদের প্রস্তাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজির রহমানের আদেশক্রমে একটি ভেটেরিনারি ট্রেনি ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প গৃহীত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রস্তাব আসা সত্ত্বেও ব্যারিস্টার বাদল রশিদের দাবিতে চুয়াডাংগা জেলার আলমডাংগা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের কুমারী গ্রামে জমিদার শৈলেন্দ্রনাথ সাহার বসতবাড়িতে ১৯৭৮ সালে ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট টি স্থাপন করা হয়।

কুমারী জমিদার বাড়ি
তৎকালীন জমিদার শৈলেন্দ্রনাথ সাহার বসতবাড়ি (কুমারী জমিদার বাড়ি)

প্রকল্প পরিচালক জনাব নূর মোহাম্মদ চৌধুরী (এডিশোনাল ডাইরেক্টর, প্রাণি সম্পদ) প্রথম অধ্যক্ষ হিসাবে ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আলমডাঙ্গাতে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠানটি পুর্নাঙ্গ রুপ পেতে এলাকার তৎকালীন কিছু গণ্য মান্য ব্যক্তিবর্গের ভুমিকাও ছিলো প্রশংসনীয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দীন, সাবেক কুমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনি, মোঃ মনিরুজ্জামান (বাবু) সহ আরো অনেকে।

এক নজরে ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আলমডাঙ্গা ক্যাম্পাস

কুমারী জমিদার বাড়ির পুকুর
ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে অবস্থিত পুকুর

দৃষ্টিনন্দন একটি বড় পুকুরসহ মোট ১০.৪ একর জমির উপরে অবস্থিত কুমারী ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসটি ৪ ভাগে বিভক্ত

  1. প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রাবাস, গো-সেড
  2. অফিসার ও স্টাফদের আবাসিক এলাকা
  3. প্রাণি হাসপাতাল
  4. ঘাসের মাঠ।
ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আলমডাঙ্গা
বর্তমান প্রশাসনিক ভবন

প্রতিষ্ঠানটির মূল প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত জমিদার শৈলেন্দ্রনাথের বসতভিটাটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাওয়াতে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রসাসনিক কাজ এবং ল্যবরেটরী হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্লাশরুম গুলো আর শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করছেন জরাজীর্ণ পরিত্যাক্ত প্রায় ভাঙ্গা ছাদযুক্ত মিলনায়তন। যেখানে যেকোন সময় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হতে পারে।

ছাত্রাবাস ও ডাইনিং, ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আলমডাঙ্গা
ছাত্রাবাস ও ডাইনিনং
গ্যারেজ, ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আলমডাঙ্গা
গ্যারেজ

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে গাড়ি তবে রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বরাদ্দ না থাকায় গাড়িগুলো অচল হয়ে পড়ে রয়েছে গ্যারেজে। ৪ জন ড্রাইভারের পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ২জন তবে সচল গাড়ি না থাকয় তাদেরও কোন কাজ নেই। দুটি ছাত্রাবাসের মধ্যে একটি দ্বি-তল এবং অপরটি তৃতীয় তলা বিশিষ্ট, রয়েছে একটি ডাইনিং, একটি কমনরুম, স্টাফ ও অফিসারদের জন্য আবাসিক ভবন।

ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আলমডাঙ্গা
গবাদীপশুর শেড

গবাদী পশুর সেড ও ঘাসের মাঠ এলাকাগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। জনবল থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ঘাসের জন্য নির্ধারিত মাঠের কোন পরিচর্যা করা হয়না বা কোন ঘাস উৎপাদন করা হয় না, ফলে মাঠটি ধীরে ধীরে জনসাধারণের দখলে চলে যাচ্ছে।

ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আলমডাঙ্গাতে চলমান কোর্সসমূহ

প্রতিষ্ঠানের প্রারম্ভ থেকে এই পর্যন্ত ১ বছর মেয়াদী ১৪ টি ব্যাচের ট্রেনিং সমাপ্ত হয়েছে। ইতমধ্যে ডিপ্লোমা সমমানের সার্টিফিকেটের জন্য পূর্বে যে সকল ব্যাচের ১ বছরের ট্রেনিং করানো হয়েছিলো সে সকল ব্যাচের পুনরায় সেমিস্টার সিস্টেমের দুই বছর মেয়াদী ইন-সার্ভিস মেকাপ কোর্স করানো হয় আরও ১৪ টি ব্যাচের যা এখনও চলমান।

এত বড় প্রতিষ্ঠিত সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও স্থানীয় উদ্যোগের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে। যে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পরে স্বনামে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর কথা ছিল তা আজ আমরা হারাতে বসেছি। এখনই উদ্যোগ না নিলে হয়তো হারাতে হবে দেশের একটি অমূল্য প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন কুমারী জমিদার বাড়িটিও। আলমডাঙ্গাবাসীর প্রাণের দাবীগুলোর মধ্যে একটি, ভেটেরিনারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট টি আবারও তার প্রাণ ফিরে পাক। সংস্কার করা হোক জমিদার বাড়িটি।