কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর এক পরিচিতজনের বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। খাদ্য তালিকায় অনেক পদের সাথে লাউয়ের তরকারির একটা পদ ছিল। তিনি যখন লাউয়ের তরকারি মুখে নিলেন তখন বাড়ির গৃহিণী সংকোচ নিয়ে জানতে চাইলেন, ‘স্যার, লাউয়ের তরকারিটা কেমন হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘ভাল হয়েছে।‘ গৃহিণী বললেন, ‘স্যার, আমি খুব ভয়ে ছিলাম কারণ লাউয়ের তরকারি রান্নার সময় লাউ তরকারি নষ্টের মন্ত্র পড়েছিলাম কয়েকবার। অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে আটকাতে পারিনি।‘ লাউয়ের তরকারি নষ্ট করার কোনো লোকজ তন্ত্রমন্ত্র থাকতে পারে এটা জেনে হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়েছিলে।
আলমডাঙ্গা অঞ্চলের লোকজ তন্ত্রমন্ত্র
আমরা দেখতে পাই আমাদের আলমডাঙ্গার সমাজ জীবনের পরতে পরতে একসময় নানা ধরণের লোকজ তন্ত্রমন্ত্র ব্যবহার হতো, ক্ষীণ ধারায় এখনও আছে। এমন কি পিঠা নষ্ট করার পর্যন্ত মন্ত্র আছে। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালাঃ চুয়াডাঙ্গা বইয়ের ‘লোকচিকিৎসা ও তন্ত্রমন্ত্র’ অধ্যায়ে আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের পিঠা নষ্ট করার দুটি লোকজ তন্ত্রমন্ত্র সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। অর্থাৎ কেউ একজন অনেক যত্ন করে ’পাকান পিটি’, ’সারা পিটি’, ’ধুপ পিটি’ ইত্যাদি বানাচ্ছে আর ঠিক সেই সময় গুণীন কবিরাজ ঐ মন্ত্র পাঠ করে বান মেরে দিল আর তাতেই কেল্লা ফতে। পিঠা হয়ে গেল অতি অখাদ্য।
আমাদের এতদঅঞ্চলের পিঠা নষ্ঠের লোকজ তন্ত্রমন্ত্রঃ
আমাদের অঞ্চলে পিঠা নষ্ঠের জন্য যে লোকজ তন্ত্রমন্ত্র ব্যবহার করা হতো তার মধ্যে অন্যতম দুটি নিচে তুলে দিচ্ছি।
লোকজ তন্ত্রমন্ত্র মন্ত্র-১
***আলো ধানের কালো পিঠা *** তিন গাইনে বানে আটা। একটা ধানে দুইটা তুষ পিঠা তলায় ভুষাভুষ।
লোকজ তন্ত্রমন্ত্র মন্ত্র-২
হেলুয়া রুটি বেলুয়া পাক যেমন রুটি তেমন থাক।
মন্ত্র দুটি মুখস্থ না করাই ভাল। পিঠা বানানোর সময় যদি মনে ভুলে মন্ত্র পাঠ হয়ে যায় তাহলে…
মৌমাছির মৌচাক ভাঙার লোকজ তন্ত্রমন্ত্র
আমরা সচারাচার দুই ধরনের মৌমাছি দেখতে পাই। একটা হেড়ে মৌমাছি আরেকটি খুদে মৌমাছি। হেড়ে মৌমাছির মৌচাক ভাঙার মন্ত্র কী সেটা জানি না, তবে খুদে মৌমাছির মৌচাক ভাঙার প্রচলিত মন্ত্রটা শিখেছিলাম। সেটা হচ্ছে-
‘ইরকিনি বিরকিনি খুদে মধুর চাক আমি এখন মধু ভাংছি, চুপ করে থাক ‘।
মন্ত্র পড়ে এবং না পড়ে দু’ভাবেই খুদে মধুর চাক ভেঙে দেখেছি। খুদে মৌমাছিরা কিছু বলেনি কারণ দুই ক্ষেত্রেই ধোঁয়া ছিল মূল নিয়ামক। ভালভাবে ধোঁয়া তৈরি করতে পারলে মৌমাছি চাক ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে সে চেষ্টা না করে মৌয়ালদের উপর নির্ভর করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মৌমাছির দংশন সুখকর কিছু না।