এ-টীম মাঠের জন্মকথা।

এ-টীম মাঠের জন্মকথা।
Tauhiduzzaman Rabbi'র ক্যামেরায় আলমডাঙ্গা এ'টিম মাঠ।

পৌরসভার সম্মুখে অবস্থিত আলমডাঙ্গা বহুমুখী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ-টীম খেলার মাঠটি শুধু স্কুলের নয়, এটা সমগ্র এলাকাবাসীর একটি বিরাট সম্পদ। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থানের কারণে খেলাধুলা বাদেও মাঠটি রাজনৈতিক সভা, ধর্মীয় সভা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের এক উল্লেখযোগ্য স্থান।

১৯১৪ সালে আমলা এস্টেটের জমিদার বাবু নীল মাধব সাহা ও বজেন্দ্রনাথ সাহার জমিতে আলমডাঙ্গা উচ্চ ইংরেজী স্কুল (বর্তমান নাম-আলমডাঙ্গা বহুমুখী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হলে বর্তমান এ-টীম মাঠটি স্কুলের ছাত্রদের খেলার মাঠ হিসেবে নির্ধারিত হয়। পরবর্তীতে খেলার মাঠ বর্তমান গোহাটের দক্ষিণ পাশে স্থানান্তরিত করা হয় এবং পূর্বোক্ত মাঠ জমিদারী মালিকানায় চলে যায়। এভাবেই ১৯৫১ সাল পর্যন্ত গোহাটপার্শ্বস্থ মাঠে খেলাধুলা চলতে থাকে।

পঞ্চাশের দশক ছিল আলমডাঙ্গা স্কুলের ক্রীড়াংগণের এক স্বর্ণোজ্জ্বল সময়। এ সময় স্কুলে একঝাঁক মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড়ের অভ্যূদয় হয়। এদের শীর্ষে ছিলেন হারুন-অর-রশিদ মোল্লা (আকু মোল্লা), আবুল বাশার মোল্লা, খো: নজির উদ্দিন, মো: শাহাবুদ্দিন (এরশাদপুর), তপন কুমার সাহা (বিস্কুট), মো: শহিদুল্লাহ ওল্টু, মো: আলাউদ্দিন (গোবিন্দপুর), মো:মোশারফ হোসেন, মো: মোফাজ্জেল হোসেন, এম শফিউল্লাহ, মো: হাফিজুর রহমান (কালিদাসপুর), মানু প্রমুখ। এরা কিভাবে জানতে পারে যে, শহরের কেন্দ্রস্থলের মাঠটিই স্কুলের জন্মলগ্ন থেকে খেলার মাঠ হিসেবে নির্ধারিত ছিল।

উপর্যুক্ত খেলোয়াড়দের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা স্কুলের ছাত্রদের মাঠটি পুনরুদ্ধারের জোর আন্দোলন শুরু হলো। ১৯৫১ সালের কোন একদিন স্কুলের ছাত্ররা এ মাঠের দখল নিয়ে নিল।

শুরু হলো অভিযোগের পালা। আমলা এস্টেটের আলমডাঙ্গাস্থ তহশীল অফিসের পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গার এস.ডি.ও. মহোদয় সমীপে উক্ত জমি দখলের অভিযোগ পেশ হল। তখন চুয়াডাঙ্গার এস.ডি.ও. ছিলেন জনৈক বেগ সাহেব। তিনি আলমডাঙ্গা স্কুলের খেলোয়াড়দের ক্রীড়া নৈপুন্যে বিমুগ্ধ ছিলেন।

একবার আন্ত:স্কুল ফুটবল খেলায় চুয়াডাঙ্গা মাঠে হারুন-অর-রশিদ মোল্লা কর্ণার কিকে সরাসরি গোল করে এস.ডি.ও. মহোদয়ের নজর কাড়েন। আর সেদিন থেকেই তিনি হারুন-অর-রশিদের ফ্যান হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি হারুন-অর-রশিদকে খুব স্নেহ করতেন। স্নেহের টানে তিনি মাঝেমাঝে বন্ডবিলের মোল্লাদের পুকুরে মাছ ধরতে আসতেন।

যাহোক, মাঠ দখলের অভিযোগ শুনানির জন্য এস.ডি.ও. সাহেব আলমডাঙ্গা আসলেন। উভয় পক্ষের শুনানির মাধ্যমে এস.ডি.ও. বাহাদুর বুঝতে পারলেন যে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ মাঠ খেলার জন্য নির্ধারিত ছিল। তিনি জমিদার পক্ষের উদ্দেশ্যে বললেন, “What is harm if the boys are allowed to play here?”

এস.ডি.ও.সাহেবের এই ইংরেজী উক্তিটি আমি হেডস্যার মো: আব্দুল জব্বার সাহেবের মুখ থেকে শুনেছি।

যাহোক, বর্তমান এ-টীম মাঠেই খেলার অনুমতি হয়ে গেল। আর গোহাট পার্শস্থ মাঠ জমিদারী মালিকানাভূক্ত হলো। পরবর্তীতে আমলা এস্টেটের জমিদারের পক্ষে সদর নায়েব হৃদয় রঞ্জন সাহা এ মাঠের ১০বিঘা জমি ১৯/০৭/৫৪ তারিখে আলমডাঙ্গা স্কুলের নামে কাগজ কলমে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে এ-টীম মাঠের মালিক আলমডাঙ্গা বহুমুখী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়।